,

কানাডার স্বপ্নে নিঃস্ব বাচ্চুর পরিবার

বিশেষ প্রতিনিধি

বিশেষ প্রতিনিধি

নভেম্বর ৫, ২০২৩ ১:৩১ অপরাহ্ণ

কানাডার স্বপ্নে নিঃস্ব বাচ্চুর পরিবার

ঢাকায় মুদি ব্যবসা করতেন বাচ্চু চৌধুরী। তার ছেলে মাস্টার্স পাস ইমতিয়াজ চৌধুরী ছিল বেকার। কানাডায় লাখ লাখ বেতনের সঙ্গে নানা সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখানো হয় তাদের। প্রস্তাবে রাজি হয়ে সম্পদ বিক্রি, ব্যাংক লোন এমনকি ধারদেনা করে ৭৫ লাখ দেন। ছেলে ইমতিয়াজকে ভুয়া কাগজপত্রও দেওয়া হয়। অন্যদিকে বাবা বাচ্চুকে কানাডার পরিবর্তে সৌদি আরবে নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। কানাডায় যেতে না পেরে এভাবেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে পিতা-পুত্রের। পাশাপাশি নিঃস্ব হয়েছে গোটা পরিবার।

বাচ্চুর স্ত্রী আলেয়া খানম দৈনিক কালবেলাকে বলেন, এমনভাবে লোভ দেখানো হয়েছে, কিছুই বুঝতে পারিনি। স্বামী ও ছেলেকে কানাডায় পাঠাতে নিজেদের সম্পদ বিক্রি করেছি, লোনও নিয়েছি। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজন ও অন্য মানুষের থেকে সুদে টাকা নিয়েও তাদের দিয়েছি; কিন্তু আমার স্বামীকে সৌদি আরবে নিয়ে জিম্মি করা হয়। তাকে নির্যাতন করে মুক্তিপণ নিয়েও শেষ পর্যন্ত কানাডা পাঠায়নি। এখন তার কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, সুখের জন্য তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়েছিলাম। ছেলে যেতে পারেনি আর স্বামীর কোনো খোঁজ নেই। যাদের থেকে টাকা ধার নিয়েছি, তারা প্রতিনিয়ত বাড়িতে আসছে। অনেক টাকা কিস্তি দিতে হয়। নিজেদের বাড়িতে থাকতে পারি না। তালা দিয় অন্যের বাড়িতে থাকি। এমন দুঃস্বপ্নের দিন আসবে কল্পনাও করিনি। ছেলে ইমতিয়াজ চৌধুরী বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল ইউরোপ যাব; কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বাবার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমাকে কানাডার ভুয়া কাগজপত্র দেওয়া হয়। যে কারণে বিমানবন্দর থেকে ফিরে এসেছি। আমাদের সাজানো-গোছানো সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে।

স্বামীর খোঁজ না পেয়ে গত ৪ অক্টোবর স্ত্রী আলেয়া খানম বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মানব পাচার অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেন। তার জবানবন্দি গ্রহণ করে উত্তরা পশ্চিম থানাকে আবেদনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন আদালত। মামলার আসামিরা হলো রাজিব কাজী, বসির মাতুব্বর, কাজী আনোয়ার হোসেন, দিল আফরোজা রুনা, কাজী রুহুল আমিন ও জহিরুল ইসলাম। এর মধ্যে রাজিব ও জহিরুল কারাগারে রয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট রাজধানীর দক্ষিণ খান থানাধীন কে এ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস অফিসে উপস্থিত হয়ে প্রতারক চক্রের মূলহোতা বসির মাতুব্বরকে ৮ লাখ টাকা দেন। পরে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে ও নগদে মোট ৭৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা গ্রহণ করে চক্রটি। গত ১৫ মে তারা বাচ্চুকে কানাডায় পাঠানোর কথা বলে সৌদি আরবে নিয়ে যায়। সেখানে সৌদিপ্রবাসী কাজী আনোয়ার হোসেন ও তার লোকজন তাকে আটক রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। বাচ্চুর মাধ্যমে ফোন দিয়ে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে ৩ লাখ টাকা পাঠায় জিম্মির পরিবার। টাকা দেওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে কানাডায় পাঠিয়ে দেবে বলে আশ্বস্ত করে। তারপর বাচ্চুকে কানাডায় পাঠানো হয়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক মো. ফারুক মিয়া কালবেলাকে বলেন, ভুক্তভোগী বাচ্চু চৌধুরীকে সৌদি আরবে নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এ ঘটনায় মামলার পর দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তদন্ত চলছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে কানাডার নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। পরে ফাঁদে ফেলে মুক্তিপণ আদায় করে। চক্রের মূলহোতা বসির দেশের বাইরে রয়েছে।

আরও পড়ুন