বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুফল পেতে দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতিবাজদের অপসারণ করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন।
যেখানে সরকারের কাজের স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য এক পদে তিন বছরের বেশি থাকার বিধান নেই। সেখানে ২০১৮ সাল থেকে অধিদপ্তরটির মুজিবকেল্লা প্রকল্প শুরুর সময় থেকে সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম কর্মরত রয়েছেন দীর্ঘ সাত বছর ধরে।
প্রথম শ্রেনীর পিআইও এর পদে পদোন্নতি হলেও সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে তদবির করে একই পদে কর্মরত আছেন এখনো। মো. আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অভিযোগে তাকে অপসার ও দুর্নীতির বিষয় তদন্তের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করেন মো. আর এম সোহেল নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে বাঁচাতে তাকে স্বপদে রেখেই লোক দেখানো একটি তদন্ত কমিটি করে।
এব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, তাকে ওই পদে রেখে দুর্নীতির তদন্ত করা হলে তা কোন কাজেই আসবে না। কারণ তদন্ত কমিটির কাছে সে নিজের মতো করে ফাইল উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন। এতে বর্তমান সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের সুফল সাধারণ মানুষ পাবে না। প্রকৃত তথ্য বের হয়ে আসবেনা বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
অভিযোগে জানা গেছে, প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম অনিয়ম ও দূনীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকা শহরে রয়েছে একাধিক বাড়ি ও ফ্লাট। এরমধ্যে রাজধানীর মগবাজার দিলুরোডে ডমিনো এ্যাপার্টমেন্টে রয়েছে বিলাসবহুল ফ্লাট। নামে বেনামে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়েছে কোটি কোটি টাকার কাজ। অর্থের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।
অভিযোগে জানা গেছে, প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম মেসার্স জান্নাত এন্টারপ্রাইজ এর কাগজপত্র ভুয়া থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্মীপুর জেলায় একটি এবং নোয়াখালী জেলায় একটি কাজ প্রদান করে মুজিবকেল্লার, যার চুক্তি মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। জান্নাত এন্টারপ্রাইজ ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলামের আত্মীয় এবং ব্যবসায়িক পার্টনার। মেসার্স খান এন্ড ব্রাদারস এর কাগজপত্র ভুয়া থাকা সত্বেও এর নামে নোয়াখালী জেলায় সুবর্ণচর উপজেলায় দুটি কাজ প্রদান করা হয়েছে আর একটি মুজিবকেল্লার যার চুক্তিমূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। খান এন্ড ব্রাদার্সের নামে আনারুল ইসলাম নিজেই ঠিকাদারি করে।
আরিফ এন্টারপ্রাইজের নামে লক্ষ্মীপুর ও ভোলা জেলায় মোট ছয়টি মুজিবকেল্লার কাজ প্রদান করা হয়েছে। যার চুক্তি মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। আরিফ এন্টারপ্রাইজ এর সাথেও পার্টনারের কাজ করে বিধায় কাজের অতিরিক্ত বিল প্রদান করেন। মেসার্স শাহ জব্বারিয়া এন্টারপ্রাইজ ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম এর বন্ধু হওয়ার সুবাদে দুইজনে পার্টনারে ঠিকাদারি করেন।
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী এবং ভোলা জেলার মনপুরা, দৌলতখান উপজেলায় মোট পাঁচটি মুজিবকেল্লার কাজ প্রদান করেন। যা ছিলো প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ভোলা জেলায় দৌলতখান এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলায় আনারুল ইসলামের দুলাভাই মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ইউনুস এন্ড সন্স এর নামে পাঁচটি মুজিবকেল্লার কাজ করেন।
যার কার্যদেশ মূল্য প্রায় ১৮কোটি টাকা। চট্টগ্রাম জেলার সন্দীপ উপজেলায় হালিমা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর নামে আনোয়ারুলের চাচাতো ভাই দুইটি মুজিবকেল্লার কাজ করে যার কার্যাদেশ মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় তৈয়বা ইন্টারন্যাশনাল এর নামে তার মামাতে দুলাভাই মুজিবকেল্লার কাজ করেন। তার কার্যাদেশ মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা।
এছাড়াও আরো কয়েকটি নামে মোট প্রায় দেড়শ কোটি টাকার মুজিবকেল্লার কাজ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম এবং তার আত্মীয়-স্বজন করেন।
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ সত্য হয়। পদে দীর্ঘদিন থাকার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কতৃপক্ষ চেয়েছে বলেই সে ওই পদে এখনো আছি।