,

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি

বিশেষ প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪ ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

রাজধানীর যানজট নিরসন ও সহজ যোগাযোগর জন্য নেয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প। চলমান প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ হঠাৎ থমকে যায়। অনেক কর্মীকে ছুটি দেয়া হয়। বিদেশি তিন কোম্পানির বিরোধে বন্ধ হয়ে যায় এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। শ্রমিকশূন্য হয়ে পড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ এলাকা। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে আদালতে মামলা করায় কাজের গতি থেমে গেছে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের সচলতা দেখতে আপাতত সিঙ্গাপুরে আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। যেহেতু সিঙ্গাপুরে আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে ইতালিয়ান-থাইয়ের আবেদন (সালিসি মামলা) বিচারাধীন সেহেতু হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা এসংক্রান্ত লিভ টু আপিলটি অকার্যকর মর্মে নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাচ বিচারপতির আপিল বিভাগ আদেশ দেন।

এই আদেশের ফলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ থাকা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের সচলতা দেখতে আপাতত সিঙ্গাপুরে আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে আদালতে বিষয়টি ওপর শুনানির দিন ধার্য আছে বলে জানা যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ বেশিরভাগ জায়গায় বন্ধ ছিল। কিছু কর্মী নিয়ে শুধু হাতিরঝিল এলাকায় কাজ চলছিল। তবে অর্থসঙ্কটে দুই মাস ধরে সেখানকার কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রকল্পের কাজ এখন পুরোপুরি বন্ধ দ্রুতগতির এ উড়ালসড়কের। কবে নাগাদ কাজ আবার শুরু হবে, তা বলতে পারছে না বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

কাজ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারেনি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড। শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে নিজেদের মধ্যে সমস্যা জিইয়ে রেখেছে এফডিইইর অধীন অংশীদার ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে ব্যয়বহুল প্রকল্পটিকে দ্রুত শেষ করার ওপর জোর দিচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রকল্প সূত্র বলছে, ভূমি সমস্যার সমাধান করার পরও মগবাজার-মালিবাগ, খিলগাঁও ও হাতিরঝিল, পান্থকুঞ্জ ও কমলাপুর এলাকায় নির্মাণকাজের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের বিলম্ব অগ্রহণযোগ্য। দ্রুত কোনো অগ্রগতি না হলে চুক্তির শর্ত অনুসারে বিবিএ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। মগবাজার, কমলাপুরের টিটিপাড়া, কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে ওয়ার্ক স্টেশন বা স্টক ইয়ার্ড এলাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে।

হাতিরঝিল এলাকায়ও কাজ বন্ধ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) বড় এ প্রকল্পে বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ডের একটি ও চীনভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ এবং নির্মাণকাজের মাধ্যমে অংশীদার। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো ইতালিয়ান থাই (ইতালথাই) ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি, চীনের শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ও সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য এফডিইই লিমিটেড নামের কোম্পানি গঠন করে ইতালথাই। এতে অংশীদার তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যথাক্রমে ৫১, ৩৪ ও ১৫ শতাংশ। বিবিএ হচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ের নির্বাহক প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শেয়ার স্থানান্তরে আদালতের যে স্থিতাবস্থা জারি ছিল, তা গত ১ সেপ্টেম্বর খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শেয়ার স্থানান্তরে আর কোনো বাধা নেই।

তাই শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টিকে অজুহাত করে কাজ বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির মতে, এর আগে বিবিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে আদালতের কার্যক্রম চলমান থাকাকে অজুহাত বানিয়ে কাজ শুরু করার বিষয়ে এফডিইইকে চাপ দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। এমনকি, আদালতে কোনো পক্ষ হিসেবেও লড়েনি বিবিএ।

১ সেপ্টেম্বর আদালতের রায়ের পর নির্ধারিত সময় আগামী বছরের (২০২৫ সাল) জুনের মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগাদা দিয়ে এফডিইইকে ১২ সেপ্টেম্বর চিঠি পাঠিয়েছে বিবিএ।

কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

২০০৯ সালে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিক নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত এবং পরে ২০ মার্চ কারওয়ান বাজার (এফডিসি) এক্সপ্রেসওয়ের অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার বলেন, হাতিরঝিলে গার্ডার তৈরির প্রস্ততি চলছে। এ কারণে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারে ইতালথাইয়ের সালিস নোটিশের ওপর শুনানি হবে।

সে সময় পর্যন্ত বিবিএ অপেক্ষা করছে। আদালত শেয়ারের ওপর স্থিতাবস্থা রাখার আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর এফডিইইকে কাজ শুরুর বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বিবিএ। বিবিএ আর সময় বাড়াবে না।

 

আরও পড়ুন