একুশে টিভির ন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ আহমেদ মুশফিক নাজনীন। জয়েন্ট নিউজ এডিটরের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন হেড অব নিউজের সাথে অন্তরঙ্গ ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন – ডিইউজের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও নাজনীন।
অথচ সাংবাদিক নেতা হওয়া সত্ত্বেও নিজ সহকর্মীদের ওপর চালিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন। একুশে টিভির সব রিপোর্টের তার রোষানল আর ষড়যন্ত্র শিকার। এমনকি তার নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি একুশে টিভির ভবনের সামনের ডিম বিক্রেতা, চা বিক্রেতা, ভিক্ষুক, দারোয়ান সবাই। এবার নির্যাতিতরাই প্রতিবাদ করেছে এই ফ্যাসিস্ট আচরণের।
নির্যাতিতদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, নিউজের স্ক্রিপ্ট দেখতে সম্পুর্ণ অক্ষম এই ন্যাশন্যাল ডেস্ক ইনচার্জ। ফিল্ড রিপোর্টিং এর ন্যূনতম ধারণা না থাকায় প্রতিনিধিদের বিপদে ফেলেছেন বারবার মুশফিকা। মর্গের ভিতর থেকে লাইভ দেয়া, ৭০ কিলোমিটার দূরের ফিল্ড থেকে ফিরে আসার পর আবারো প্রতিনিধিদের ফিল্ডে যেতে নির্দেশ দিতেন তিনি। বাস্তবতার কারণে কেউ অপারগ হলেই চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি ও ফোনে খারাপ আচরণ, গালিগালাজ দেন এই আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক।
মুশফিকা একুশে টিভিতে ২০০৯ সালে যোগ দেয়। ২০২৪ পর্যন্ত যতবারই ম্যানেজমেন্ট চেঞ্জ হয়েছে- মুশফিকার অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে। কারণ, সাপ্লাই মাস্টার মুশফিকা অদ্ভুত এক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আব্দুস সালাম থেকে এস আলম, বুলবুল থেকে রাশেদ চৌধুরী সবখানেই সাপ্লাই দিয়ে ম্যানেজ করেছেন এই সাংবাদিক। আর তাই সহকর্মীরা আড়ালে তার নাম দিয়েছেন সর্দারনী/ মাসী। কথিত আছে বুল্বুল তাকে নিয়ে বাথরুমের কমোড ভেঙে ফেলেছিলো।
আর বাথরুমের কমোড ভাঙা এই মুশফিকার বিরুদ্ধে বসদেরকে প্রেজেন্টার ও নারী রিপোর্টার সাপ্লাই দেয়ার অভিযোগ বেশ পুরাতন। এরপর নিজের সুবিধা আদায় করে নিতে তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করতেও ছাড়ে না। তার অনুমতি ছাড়া ৪ আগস্ট পর্যন্ত কারো নিয়োগ হওয়া সম্ভব ছিল না৷ কোনো প্রেজেন্টার তার সুপারিশ ছাড়া প্রাইম নিউজ পড়ারও সুযোগ পেতেন না।
ইটিভির সাবেক হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও রবিউল হাসান অভী এবং এইচ আর অ্যাডমিন হেড নাসিম হোসেনকে নারী ও নিজ বাসায় মদের আসর দিয়ে হাত করেছিলেন মুশফিকা নামের এই সাংবাদিক বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে মুশফিকার কথাই ছিল একুশে টিভিতে শেষ কথা। এই আওয়ামী মুখোশ পরা সাংবাদিক প্রেজেন্টার মহিমা পলি, ফেরদৌসী প্রীতি, নার্গিস মজিদ লিমা, নিউজরুম এডিটর আফসানা নীলা, রিপোর্টার সাকেরা আরজু, শিউলী সবনমসহ বেশ কয়েকজনকে এ কাজে ব্যবহার করতো। যার ফলাফল একুশে টিভিতে সব অনুষ্ঠান বা নিউজে এদের আধিপত্য ছিল। আর পুরো নিউজ বিভাগের উপর আধিপত্য ছিল মুশফিকা নাজনীনের।
এছাড়া বিভিন্ন বিটের বেশ কয়েকজন রিপোর্টার তাওহীদ, আকবর সুমন, প্রনব চক্রবর্তী, মফিউরকে দিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন মুশফিকা। যার ফলে সচিবালয় থেকে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত সবখানেই তার কাজ ম্যানেজ করতো এরা এবং একই সাথে রিপোর্টিং টিমের উপর প্রভাবও বজায় রাখতো।
নানা উপলক্ষে বার্তা বিভাগের জন্য যে কোনো কিছু কেনার পুরো দায়িত্ব যেকোনভাবে নিয়ে নিতো মূশফিকা। নানা অপ্রয়োজনীয় আয়োজনে নিউজরুম থেকে তো বটেই জেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকেও টাকা চাইতেন। সাথে বাড়তি আবদার থাকতো আম, লিচু কলা, মাছ। না পেলেই সেই প্রতিনিধির নিউজ দেয়া বন্ধ হয়ে যেত। এর জেরে বেশ কয়েক জেলার বর্ষিয়ান সাংবাদিকদের চাকরি খেয়েছে মুশফিকা। হেড অব নিউজ ও এমডির কাছে তার নামে অভিযোগ করেও কোনো ফল না পেয়ে চাকরি ছেড়েছেন অনেকে। এক জেলা প্রতিনিধি জানায়, হাঁস পার্টি করবেন তাই তার কাছে হাঁস চেয়েছেন।
২০২৩ পর্যন্ত ৭/৮ জনের বন্ধুবান্ধবদের দল নিয়ে বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ করতেন মুশফিকা। যার আনুষঙ্গিক খরচ, থাকা-খাওয়া, জেলার ঐতিহ্যবাহী উপহার সবই জেলা প্রতিনিধিকে বহন করতে হতো। বিভিন্ন সময় তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে যেতেন সাথে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন প্রেজেন্টার।
অতীতে অভিযোগ করতে ভয় পেলেও এবার দ্বিতীয়বার যোগ দেয়া চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের কাছে লিখিত ২ পাতার বিশাল অভিযোগ জানিয়েছে জেলা প্রতিনিধিরা। তারা আশা করছেন, খুব দ্রুত এই দুর্নীতিবাজ ও নির্যাতনকারী সাংবাদিকের হাত থেকে দেশের প্রথম টেরিস্টেরিয়াল চ্যানেলকে রক্ষা করবে নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি৷